সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃ
কাটুনিয়া রাজবাড়ী কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল ওহাবের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের সীমাহীন দুর্নীতি এবং কোটি কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।
রবিবার (১৮ আগস্ট) সকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে এক তীব্র প্রতিবাদ সমাবেশে শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকরা একত্রিত হয়ে অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে সোচ্চার হন।
কলেজের শিক্ষকদের মধ্যে অনেকেই মনে করছেন, অধ্যক্ষের দুর্নীতি এবং স্বজনপ্রীতির কারণে কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
কাঠুনিয়া রাজবাড়ী কলেজের উপাধ্যাক্ষ মোঃ ওলিউল ইসলাম বলেন, অধ্যক্ষের এই দুর্নীতির বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে চলমান। আমরা একাধিকবার তাকে সতর্ক করেছি, কিন্তু তিনি তা উপেক্ষা করেছেন। আজকের এই সমাবেশে আমরা তার পদত্যাগ দাবি করছি। কলেজের শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ রক্ষার স্বার্থে এই দাবি পূরণ হওয়া অত্যন্ত জরুরি।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এস এম ফজলুল হক বলেন,আমি দীর্ঘদিন ধরে এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। এমন নৈতিকতার অভাব দেখিনি। শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে ক্রোধ ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে, তা অযৌক্তিক নয়। অধ্যক্ষের পদত্যাগই এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ গোলাম শাহনেওয়াজ (রাজু) বলেন,অধ্যক্ষের এই দুর্নীতি কেবল একটি ব্যক্তিগত ব্যর্থতা নয়, বরং পুরো শিক্ষাব্যবস্থার ওপর আঘাত। এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে, এবং তা করার প্রথম পদক্ষেপ হলো তার পদত্যাগ। আমরা শিক্ষার্থীদের সাথে আছি এবং তাদের দাবিকে সমর্থন করছি।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ মোরশেদ আলম বলেন,সমাজের উন্নয়নের মূলভিত্তি নৈতিকতা। একজন শিক্ষক হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, শিক্ষার্থীদের সামনে উদাহরণ হিসেবে সততা ও নৈতিকতা থাকা উচিত। কিন্তু অধ্যক্ষের কর্মকাণ্ড শিক্ষার্থীদের ভুল দিকনির্দেশনা দিচ্ছে। আমরা চাই, তিনি পদত্যাগ করে একটি নৈতিক শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনুন।
ইসলাম শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডঃ মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের সৎ জীবনযাপন ও নৈতিকতার শিক্ষা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। কিন্তু যখন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষে থাকা ব্যক্তিটি দুর্নীতির সাথে জড়িত, তখন সেই শিক্ষা অর্থহীন হয়ে যায়। আমরা একটি নৈতিক পরিবেশ চাই, এবং তার পদত্যাগ সেই পরিবেশ প্রতিষ্ঠার প্রথম ধাপ।
অভিভাবকের পক্ষ থেকে মোবারক হোসেন মন্টু বলেন, আমরা আমাদের সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে এখানে ভর্তি করিয়েছি, কিন্তু এখন দেখছি দুর্নীতি আর অযোগ্যদের রাজত্বে সেই স্বপ্ন ভেঙে পড়ছে। আমরা চাই, অবিলম্বে এই দুর্নীতির অবসান ঘটানো হোক।
ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষ থেকে আবু হাসান বলেন, আমরা এই কলেজের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে অধ্যক্ষের দুর্নীতির শিকার। নিয়োগ বাণিজ্যের কারণে আমরা যোগ্য শিক্ষক পাচ্ছি না, ফলে আমাদের পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অধ্যক্ষের পদত্যাগ না হলে আমরা আমাদের আন্দোলন আরও জোরদার করব।
সমাবেশ শেষে ছাত্ররা অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে কলেজ ক্যাম্পাসজুড়ে মিছিল করে। আন্দোলনকারীরা সতর্ক করে দেন যে, যদি ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অধ্যক্ষ পদত্যাগ না করেন, তাহলে তারা আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবেন এবং এর সব দায়ভার প্রশাসনকেই বহন করতে হবে।
আজকের সমাবেশে শত শত ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক এবং স্থানীয় মানুষজন অংশগ্রহণ করেন।