বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
দেবহাটায় রস সংগ্রহে খেজুর গাছ প্রস্তুত করতে ব্যস্ত গাছিরা গাবুরায় বাল্যবিবাহ ও পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধে পিতামাতাদের সাথে সংলাপ শ্যামনগরে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে নব যোগদানকৃত নিবার্হী অফিসার রনী খাতুনের মতবিনিময় শ্যামনগরে সরকারী সেবায় স্থানীয় জনগোষ্টীর প্রবেশাধিকারের লক্ষ্যে সংলাপ ও মতবিনিমময় বুড়িগোয়ালিনীতে পরিবেশবান্ধব ব্যবসা বিষয়ক পরামর্শ সভা দেবহাটায় সিভিএ ওয়ার্কিং গ্রুপের ইন্টারফেইস মিটিং সাতক্ষীরা টু কালিগঞ্জ মহাসড়ক সংস্কারের দাবিতে দেবহাটায় জামাতের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত কোডেকের পরিবেশবান্ধব ব্যবসা বিষয়ক পরামর্শ সভা কালিগঞ্জ বিএনপির আয়োজনে সাম্য ও মানবিক সমাজ বিনির্মাণে ঐতিহাসিক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে দেবহাটার সখিপুরে আবাসিক এলাকায় কারখানা, মানছে না কোন বাঁধা!
নোটিশ :
Wellcome to our website...

কোরবানির মাংস যেভাবে সংরক্ষণ করলে বহুদিন ভালো থাকবে

সংবাদদাতার নাম : ৯৭ Time View
Update : শনিবার, ১৫ জুন, ২০২৪, ১:৩৭ পূর্বাহ্ন

ভোরের সংবাদ ডেস্ক:

কোরবানির ঈদে মাংস কাটা ও বিতরণের পর চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় এতোগুলো মাংস একসঙ্গে সংরক্ষণের বিষয়টি। মাংস সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সেটাকে রেফ্রিজারেট করে রাখা সবচেয়ে সহজ ও নিরাপদ উপায় হলেও বিকল্প আরো নানা পদ্ধতিতে মাংস সংরক্ষণ করতে পারবেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘ সময় ফ্রিজে মাংস সংরক্ষণ করে রাখার ফলে মাংসের স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া মাংসে নানান ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণও শুরু হয়। তাই ফ্রিজে সংরক্ষিত মাংস রান্না করে খাওয়ার পর অনেকেরই পেটে গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়। অনেকের এর সঙ্গে দেখা দেয় বমি ভাব, অস্বস্তি, বুক জ্বালা পোড়া ইত্যাদি।

চিকিৎসকরা বলছেন, পুষ্টিগুণের কথা চিন্তা করলে কোরবানির মাংস এক মাসের মধ্যেই খেয়ে ফেলা উচিত। তবে তা সবার জন্য বাস্তবমুখী হয় না। মাংস সংরক্ষণের প্রধান উদ্দেশ্য হলো তা জীবাণু মুক্ত রাখা, স্বাদ ও গুণগত মান যথাসম্ভব অক্ষুণ্ন রাখা, পচন রোধ করা, খাদ্যবাহিত রোগ সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকা। এজন্য অবশ্যই কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। মাংস বেশিক্ষণ বাইরে রাখলে ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণ হতে পারে। তাই মাংস বাড়িতে আসার পর দ্রুত সেটা ভালোভাবে ধুয়ে, রক্ত পরিষ্কার করে রান্না করতে হবে। অথবা ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে হবে। মাংস অবশ্যই প্লাস্টিকের ব্যাগে বা ‘অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল’য়ে মুড়ে রাখতে হবে। এতে মাংসে বাতাস ঢুকবে না। ফলে ব্যাক্টেরিয়া জন্মানোর আশঙ্কা কমবে।

ফ্রিজে সংরক্ষণ করা সম্ভব না হলে মাংস সঠিকভাবে জ্বাল দিয়ে রাখতে হবে। আর ছয় ঘণ্টা পরপর সেটা পুনরায় জ্বাল দিতে হবে। মাংস লম্বা টুকরা করে লবণ ও হলুদ মেখে রেখে রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা যায়। চর্বিযুক্ত মাংস স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই মাংস কাটার সময় চর্বি বাদ দেয়াই ভালো। মাংসের ভেতরে যে চর্বি আছে সেটা গলাতে গরম পানিতে মাংস সিদ্ধ করে নিতে পারেন। রান্নার সময় মাংসের টুকরাগুলো ছোট করে কাটলে এবং মাংসে টক দই, লেবুর রস, সিরকা, পেঁপে বাটা দিয়ে মেখে রাখলে একদিকে যেমন কম সময়ে মাংস সিদ্ধ হয় তেমনি চর্বির ক্ষতিকর প্রভাব অনেকটাই কাটানো যায়।

মাংস সংরক্ষণ

মাংস সংরক্ষণের সঠিক পদ্ধতি

প্রথমেই ফ্রিজ ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। কারণ দীর্ঘদিন মাংস সংরক্ষণের জন্য ফ্রিজ পরিষ্কার থাকা খুবই জরুরি। ফ্রিজে আগের মাছ ও মাংসের কারণে গন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। মাংস সংরক্ষণের আগে অবশ্যই ভালোভাবে রক্ত ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। ধোয়ার পর অতিরিক্ত পানি ঝরানোর জন্য বড় ঝুড়িতে রেখে দিন। মাংস থেকে পানি ঝরে গেলে পলিথিন বা প্লাস্টিকের প্যাকেটে রেখে – ভালোভাবে মুখ পেঁচিয়ে বা বন্ধ করে ফ্রিজে রাখতে হবে।

কোরবানির তিন থেকে চার ঘণ্টা পর্যন্ত মাংস শক্ত থাকে। এসময় মাংস ফ্রিজে না রাখাই ভালো। পরে খানিকটা নরম হলে মাংস সংরক্ষণ করতে হবে। ফ্রিজে সংরক্ষণের জন্য মোটা ও ভালো মানের পলিথিন বেছে নেয়া উচিত। একেকটি মাংসের প্যাকেট রাখার সময় মাঝে মোটা কাগজের টুকরা দিয়ে রাখা যেতে পারে। এতে একটি মাংসের প্যাকেটের সঙ্গে অন্য প্যাকেট আটকে যাওয়ার ঝুঁকি থাকবে না। মাংস সংরক্ষণের জন্য অবশ্যই নতুন ও পরিষ্কার প্যাকেট ব্যবহার করতে হবে। পুরানো বা আগের ব্যবহৃত পলিথিন ব্যবহার করলে মাংস গন্ধ হয়ে যেতে পারে। ফ্রিজে মাংস রাখার পর তাপমাত্রা কমিয়ে দিতে হবে। এতে মাংস তাড়াতাড়ি জমবে।

স্বাস্থ্যবিদদের মতে, এক বছর পর্যন্ত মাংস সংরক্ষণ করতে চাইলে ফ্রিজের তাপমাত্রা থাকতে হবে মাইনাস ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে বাসাবাড়িতে থাকা ফ্রিজগুলোতে সাধারণত এতটা ঠাণ্ডা করার সুবিধা থাকে না। সেক্ষেত্রে মাইনাস চার ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে মাইনাস পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় মাংস রাখলে পাঁচ থেকে ছয় মাস পর্যন্ত ভালো থাকবে। মাংস রাখার পর ফ্রিজ যতটা সম্ভব কম খোলার চেষ্টা করতে হবে।

ফ্রিজ ছাড়া মাংস সংরক্ষণের সঠিক উপায়

মাংস সংরক্ষণের কাজটাকে খুব সহজ করে দিয়েছে ফ্রিজ। তবে যান্ত্রিক ত্রুটি বা বিদ্যুৎ-বিভ্রাটে ফ্রিজ যদি অচল থাকে? তাহলে কীভাবে সংরক্ষণ করবেন কোরবানির মাংস। নিচে ফ্রিজ ছাড়া মাংস সংরক্ষণের সঠিক উপায় দেয়া হলো-

জ্বাল দিয়ে সংরক্ষণ: হাঁড়িতে সামান্য পানি নিয়ে মাংসের টুকরাগুলো ঢেলে দিন। মাংসের পানি মোটামুটি শুকানো পর্যন্ত চুলায় মাঝারি আঁচে জ্বাল দিন। মাংস যাতে সমানভাবে জ্বাল পায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জ্বাল দেওয়ার সময় হাঁড়ি ঢেকে রাখতে হবে। মাঝে মাঝে একটু নেড়েচেড়ে উল্টেপাল্টেও দিতে হবে। তাহলে আর নিচ দিয়ে লেগে যাওয়ার ভয় থাকবে না। মৃদু মাঝারি আঁচে রোজ দুই-তিন বেলা এই মাংস জ্বাল দিয়ে রাখতে হবে। একই নিয়মে ঢাকনা দিয়ে ভালোভাবে নেড়েচেড়ে জ্বাল দিন।

তিন-চার মাসের জন্য

মাংস চর্বিসহ বড় টুকরা করতে হবে। অল্প পানি, সামান্য তেল, লবণ আর হলুদ মাংসসহ হাঁড়িতে দিন। সঙ্গে দিন সামান্য আদাকুচি, দুই-তিন টুকরা করে তেজপাতা ও দারুচিনি এবং দুই-তিনটি করে এলাচি ও লবঙ্গ। অল্প আঁচে জ্বাল দিন। সব দিকে সমান জ্বাল নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন। মাঝেমধ্যে নেড়েচেড়ে উল্টেপাল্টে দিন। প্রথম ৮-১০ দিন তিন বেলা করে জ্বাল দিতে হবে। পরের ৮-১০ দিন দুই বেলা করে জ্বাল দিলেই হবে। এরপর থেকে রোজ একবার করে জ্বাল দিতে হবে। জ্বাল দিন মৃদু মাঝারি আঁচে, ঢেকে নিয়ে। একইভাবে মাঝেমধ্যে উল্টেপাল্টেও দিন। ফ্রিজ ঠিক হয়ে গেলে চাইলে এই অবস্থাতেই ডিপ ফ্রিজে তুলে রাখা যাবে। তবে এই মাংস ডিপ ফ্রিজে তুলে রাখার দুই-তিন মাসের মধ্যেই খেয়ে নেয়া ভালো।

পাঁচ-ছয় মাসের জন্য

চর্বি ছাড়া মাংসের ছোট ছোট পাতলা টুকরা ধুয়ে পানি ঝরিয়ে ফেলুন। পরিষ্কার, পাতলা সুতি কাপড় দিয়ে মুছে নিন। একেবারে শুকনা হয়ে গেলে সামান্য ভিনেগার এবং পর্যাপ্ত লবণ মাখিয়ে নিন। শুকনা, বায়ুরোধী পাত্রে সংরক্ষণ করুন। পাঁচ-ছয় মাস ভালো থাকবে। প্রয়োজনমতো মাংস বের করে নিয়ে রান্না করুন। রান্নার আগে গরম পানিতে ঘণ্টাখানেকের জন্য মাংস ডুবিয়ে রাখুন। মাসখানেক বা তার বেশি সময় ফ্রিজ ছাড়া মাংস সংরক্ষণ করতে হলে হাড়ের অংশ বাদ দিতে হবে যতটা সম্ভব।

আরো যেসব উপায়ে কোরবানির মাংস সংরক্ষণ করা যায়

ক্যানিং পদ্ধতিতে মাংস সংরক্ষণ: মাংস সংরক্ষণের আরো এক পদ্ধতিকে থার্মাল স্টেরিলাইজেশন বলে। এক্ষেত্রে মাংস প্রায় ২৫০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় ড্রাই করে ঠাণ্ডা করা হয়। এরপর কাচের জার বা বয়ামের মুখ আটকে তাতে এই মাংস প্রায় এক বছর রাখা যায়। এই পদ্ধতিতে মাংস সংরক্ষণের ক্ষেত্রে মাংস কাটা, রান্নার আগে সিমিং, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, ঠান্ডা করা ইত্যাদি বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে।

স্মোকিং পদ্ধতিতে মাংস সংরক্ষণ: এটিও একটি পুরোনো পদ্ধতি। যেখানে হট স্মোকিং অর্থাৎ ৩০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় মাংস পোড়ানো হয়। আর কোল্ড স্মোকিং পদ্ধতিতে ১২-২৪ ঘণ্টা স্মোকিং আগুনে ৮৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় পোড়াতে হয়। এরফলে তাপের ধোঁয়ায় মাংসের মাইক্রোবসগুলো নষ্ট হয়ে যায়। এই পদ্ধতি সাধারণত মাংস ব্যবসায়ীরা ব্যবহার করে থাকেন।

লবণ পদ্ধতিতে মাংস সংরক্ষণ: লবণ পদ্ধতিতে মাংস সংরক্ষণ করতে পারবেন। এই পদ্ধতিতে লবণ, কিউরিং লবণ, মসলা এবং ব্রাউন চিনি অথবা খাবার লবণ, সোডিয়াম নাইট্রেট ও সোডিয়াম ল্যাকটেট দিয়ে মাংস মেখে ২৪ ঘণ্টা রেখে ফ্রিজে ১ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। এই পদ্ধতি টিএফডিএ অনুমোদিত। সল্টিং পদ্ধতিতে মাংস সবচেয়ে বেশি টাটকা এবং পুষ্টিগুণসম্পন্ন হয়ে থাকে। মাংসের অক্সিডেটিভ ও মাইক্রোবিয়াল পচন প্রতিরোধ এই পদ্ধতিতে সবচেয়ে ভালো হয়।

ড্রাইং পদ্ধতিতে মাংস সংরক্ষণ : অতীতে যখন ফ্রিজের ব্যবহার ছিল না, তখন পুরোনো এই পদ্ধতিতে মাংস রোদে বা চুলায় জ্বাল দিয়ে ৭০-৮০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় সম্পূর্ণ পানি শুকিয়ে নেয়া হতো। এই পদ্ধতিতে মাংস সংরক্ষণ খুবই কম খরচে করা যায়। এক্ষেত্রে মাংসের চর্বি ফেলে দিয়ে পাতলা করে কেটে ভ্যাকিউম-সিল্ড করে ফ্রিজে ১ বছর পর্যন্ত রাখা যায়।


More News Of This Category