প্রশাসন ক্যাডারে বিভিন্ন সময়ে দলীয় আনুগত্যের কারণে বিশেষ সুবিধা নেওয়া আমলাদের কালো তালিকাভুক্তির কাজ চলছে। প্রতিটি ব্যাচের চিহ্নিত দলবাজ কর্মকর্তাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। অতীতের কর্মকাণ্ড এবং সরকার দলের সাথে সংশ্লিষ্টতার ভিত্তিতে যেসব সুবিধা তারা গ্রহণ করেছেন, সেসব বিস্তারিত উল্লেখ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অতিদ্রুত এই কালো তালিকাভুক্তির কাজ শেষ করা হবে। এসব কর্মকর্তার নাম, ব্যাচ এবং পরিচিতি নম্বরের পাশে ‘ব্ল্যাকলিস্টেড’ চিহ্ন দিয়ে রাখা হবে। তবে সৎ, নির্ভীক ও ন্যায়নিষ্ঠ কর্মকর্তাদের যেন অযথা হয়রানি না হয়, সেদিকে বিশেষভাবে নজর রাখা হচ্ছে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এরপর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। কিন্তু নতুন সরকারকে বিতর্কিত করার এবং কাজের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্য একটি চক্র বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করে আসছে। সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে সচিবালয় অবরুদ্ধ করে রাখার চেষ্টাও চলছে।
সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মো. মাহবুব হোসেনকে আওয়ামী লীগ সরকার মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে নিয়োগ দেয়। চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তাকে এক বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরও তার এই নিয়োগ বাতিল করা হয়নি, যা বর্তমান সরকারের জন্য একটি বিতর্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, তিনি পদোন্নতিবঞ্চিতদের প্রাপ্যতা অনুযায়ী পদোন্নতি দিতে বাধা সৃষ্টি করছেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রশাসনকে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের দলীয় প্রভাবমুক্ত করার জন্য যোগ্য কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়ার চেষ্টা করছে। তবে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের ভাই মইনুল ইসলামকে সচিব করার জন্যও পাঁয়তারা চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রশাসনের বিভিন্ন ব্যাচে আওয়ামী লীগের সাথে সংশ্লিষ্টতা থাকা কর্মকর্তাদের কালো তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। বিসিএস ৯ম থেকে ২৭তম ব্যাচ পর্যন্ত কর্মকর্তাদের তালিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে। বিশেষ করে বিসিএস ১৩, ১৫, ১৭, ১৮, ২০, ২২ এবং ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্বাস্থ্যবিভাগ থেকে বদলি করে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য করা হয়েছে বিসিএস ১১তম ব্যাচের কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমকে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এপিএস থাকা এই কর্মকর্তা প্রশাসনে তার প্রভাব বজায় রেখেছেন। একইভাবে বিসিএস ১৩তম ব্যাচের কর্মকর্তা মো. খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে।
প্রশাসনের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করার জন্য দলবাজ কর্মকর্তারা সচেষ্ট রয়েছেন। এ অবস্থায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দলীয় প্রভাবমুক্ত প্রশাসন গঠনের জন্য এসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলমও দলবাজ কর্মকর্তাদের অপসারণের ঘোষণা দিয়েছেন।
প্রশাসন ক্যাডারে দলবাজ কর্মকর্তাদের তালিকাভুক্তির এই পদক্ষেপ একটি নিরপেক্ষ এবং দক্ষ প্রশাসন গঠনে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।